ভিটামিন সি এর উপকারিতা

ভিটামিন সি এর উপকারিতা ও অভাবজনিত ফলাফল

প্রাণীজ খাদ্যগুলোতে ভিটামিন সি খুব কম পরিমানে পাওয়া যায়, শুধুমাত্র মায়ের দুধে কিছু পরিমানে ভিটামিন সি পাওয়া যায় । উদ্ভিজ্জ খাদ্যগুলোতে বিশেষ করে টকজাতীয় ফলগুলোতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি পাওয়া যায় ।

 

আজ আমরা এখানে ভিটামিন সি এর উপকারিতা গুলো আর উৎস গুলো সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে জানবো, যাতে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় নূন্যতম পরিমানে ভিটামিন সি থাকে এবং আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এর অভাব না হয় ।

 

ভিটামিন সি এর রাসায়নিক নাম : Ascorbic Acid(অ্যাসকরবিক অ্যাসিড)

 

আমাদের শরীর ভিটামিন সি তৈরী করতে পারে না,তাই আমাদেরকে বাইরে থেকে খাদ্যের মাধ্যমে এটি গ্রহণ করতে হয় বা সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে নিতে হয় ।

চলুন তাহলে জেনে নিন যে, ভিটামিন সি আমাদের শরীরের জন্যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ…


 

ভিটামিন সি এর উপকারিতা :

১) শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট :

ভিটামিন সি আমাদের শরীরে একটি শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে ।

ভিটামিন সি তে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আমাদের শরীরে তৈরী হওয়া ফ্রি রেডিক্যাল গুলোকে নিউট্রিলাইজ করে অর্থাৎ দূষিত ও বিষাক্ত পদার্থ গুলোকে আমাদের শরীর থেকে বাইরে বের করে দিয়ে আমাদের শরীরকে ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সারের কোষ তৈরী হতে বাধা দেয় ।

এইভাবে ভিটামিন সি আমাদের শরীর কে ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা করে ।

 

 

২) রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা :ভিটামিন সি এর উপকারিতা

নিয়মিত ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায় ।

সেইকারণে  প্রধানত শীতকালে সর্দি-কাশি বা অন্য কোনো ধরণের সংক্রমণ হলে ডাক্তার ভিটামিন সি যুক্ত খাবার বা ভিটামিন সি ট্যাবলেট নেওয়ার পরামর্শ দেন |

 

 

৩) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ :

গবেষণাগারে এটি প্রমাণিত যে, ভিটামিন সি আমাদের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, ভিটামিন সি বৃক্কের মধ্যে থাকা রক্তনালী গুলো অর্থাৎ শিরা ও ধমনী গুলো থেকে জল ও সোডিয়াম অপসারণের মাধ্যমে রক্তনালীর চাপ কমায়, যার ফলে শরীরে রক্তচাপ কমে যায়।

 

এইভাবে ভিটামিন সি আমাদের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ।

 

 

৪) ক্ষতস্থান নিরাময় :

ভিটামিন সি এর উপকারিতা গুলোর মধ্যে এর আর একটি বিশেষ গুন  হলো, ক্ষতস্থান দ্রুত সারিয়ে তোলার ক্ষমতা । অর্থাৎ কোথাও কেটে গেলে, পর্যাপ্ত পরিমানে যদি ভিটামিন সি খাওয়া যায় তাহলে খুব তাড়াতাড়ি কাটা জায়গা টি শুকিয়ে যায় ।

এছাড়াও যদি হার ভেঙে যায় বা ফ্র্যাকচার হয়ে যায় অথবা কোনো জায়গা খুব সাংঘাতিক ভাবে পুড়ে যায়, সেই ক্ষেত্রে – আমরা ডেইলি যে পরিমানে ভিটামিন সি খাই তার থেকে একটু বেশি পরিমানে ভিটামিন সি খেলেও ভালো ফল পাওয়া যায় ।

 

এককথায় শরীরে পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন সি থাকলে কাটাছেড়া জায়গা গুলো সহজেই শুকিয়ে যায় ।

 

৫) বার্ধক্য রোধ করে  :

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন সি খেলে আমাদের ত্বকের ( skin ) আর্দ্রতা বজায় থাকে, ত্বক মসৃন হয় , উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এছাড়াও ত্বকের আরও  বিভিন্ন রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় ।

সুতরাং, এটা বলা যেতেই পারে যে ভিটামিন সি আমাদেরকে বার্ধক্য জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় অর্থাৎ শরীরে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না ।

 

৬) লোহিত রক্তকণিকা :

ভিটামিন সি  হলো একটি জলে দ্রবণীয় ভিটামিন,  সেইজন্যে এই ভিটামিন আমাদের দেহ থেকে সহজেই আয়রন শোষণ করতে পারে । আর এই আয়রন লোহিত রক্তকণিকার হিমোগ্লোবিন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

এক কথায় বলা যেতে পারে যে – ভিটামিন সি শরীরে রক্ত তৈরিতে সহায়তা করে  এবং শরীরে আয়রনের অভাবও পূরণ করে ।

 

 

৭) দাঁতের মাড়ি সুস্থ্য রাখে :ভিটামিন সি এর উপকারিতা

বিশেষ করে শীতকালে মাঝে মধ্যেই দেখা যায় দাঁতের মারি দিয়ে রক্ত পড়তে, এটি আসলে ভিটামিন সি এর অভাবেই হয়ে থাকে । নিয়মিত ভিটামিন সি যুক্ত খাদ্য খেলে এই ধরনের সমস্যা সাধারণত হয় না ।

 

এক কথায় বলা যেতে পারে যে – ভিটামিন সি মাড়িকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে |

 

 

৮) মানসিক চাপ কমায় :

অনেকসময় আবার মানসিক চাপ কমানোর জন্যেও ভিটামিন সি এর ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।


 

উৎস :

 

ভিটামিন সি এর উপকারিতা সম্পর্কে তো অনেক কিছুই জানলেন , এবার তাহলে জেনে নিন যে ট্যাবলেট ছাড়া কোন কোন খাবারে ভিটামিন সি প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায় …

 

বিশেষ করে সমস্ত টকজাতীয় ফালগুলোতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি পাওয়া যায় ।

যেমন……..

আমলা ,

পেয়ারা ,

লেবু ,

আঙ্গুর,

কামলা লেবু ,

আনারস ইত্যাদিতে পাওয়া যায়।

 

এছাড়াও

টমেটো,

মিষ্টি আলু,

বাধাকপি,

কাঁচা লঙ্কা,

অঙ্কুরিত চলা,

পালংশাক ইত্যাদি শাকসব্জিতেও যথেষ্ট পরিমানে ভিটামিন সি পাওয়া যায় |

 

 

আরও পড়ুন: লেবুর উপকারিতা(Benefits of lemon)

 

 


অভাবজনিত ফলাফল :

ভিটামিন সি এর উপকারিতা ও উৎস সম্পর্কে তো জানলেন, এবার তাহলে এটাও জেনে নিন যে, শরীরে এই ভিটামিনের অভাব ঘটলে কি কি সমস্যা গুলো হতে পারে। …

 

১) ভিটামিন সি এর এভাবে যে সব রোগ গুলো হয় তাদের মধ্যে সবথেকে গুরুতর রোগটি হলো – স্কার্ভি রোগ । স্কার্ভি রোগ হলে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায় এবং মাঝে মধ্যেই মাড়ি দিয়ে রক্ত পরে ।

কোথাও কেটে গেলে সহজে সেই ক্ষত স্থান শুকায় না, এমনকি জয়েন্ট গুলোতেও ব্যাথা করতে শুরু করে ।

 

২) সামান্য আঘাতেই রক্ত বেরোতে শুরু করে, রক্তে লোহিত রক্তকণিকার পরিমান কমে যেতে থাকে, এর ফলে অনেক সময় রক্তাল্পতা বা এনিমিয়া রোগ দেখা দেয়।

 

৩)এছাড়াও শরীর দুর্বল অনুভব হয়, অনেক সময় ক্ষুধা কমে যায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, যার ফলে খুব সহজেই ঠান্ডা লেগে যায়।

 

 

আরও পড়ুন: পেটের মেদ কমানোর সহজ উপায় 

 

 


আশা করছি , আর্টিকেল টি পড়ে ভিটামিন সি এর উপকারিতা, উৎস এবং শরীরে ভিটামিন সি এর অভাব হলে কি কি ধরনের সমস্যা হতে পারে সে সব সম্বন্ধে আপনাদের মধ্যে একটি স্পষ্ট ধারণা জন্মেছে ।

এক কথায়: ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ।। শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ।। ক্ষতস্থান দ্রুত নিরাময় করতে সাহায্য করে ।। স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে ।। মানসিক চাপ কমায় ।। ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করে ।।

 


 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *