আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

আমলকি খাওয়ার উপকারিতা গুলো জানার আগে বেশ কিছু বিষয়ের উপর আলোকপাত করা দরকার, আমলকি এমন একটা ফল যার মধ্যে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি পাওয়া যায় যা প্রায় লেবু বা কামলাতে উপস্থিত ভিটামিন সি এর পরিমানের ১৫ থেকে ২০ গুনের সমান ।

তাহলে বুঝতেই পারছেন যে একটা মাঝারি মাপের আমলকি খেলে কত পরিমানে ভিটামিন সি পেতে পারেন !

সাধারণত রঙীন ফল বা রঙীন সবজিতে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় । আমলকি প্রাকৃতিকভাবে সবুজ বা হলদে-সবুজ হয়, তাই আমলকি তে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় । আমলকির এতো গুণাবলীর জন্যে বহুদিন আগে থেকেই আমলকি চিকিৎসাশাস্ত্রে বিশেষ করে আয়ুর্বেদশাস্ত্রে এটি খুব ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।

আমলকির এতো উপকারী গুনের কারণে এটিকে অনেকসময় ফলের রাজাও বলা হয়ে থাকে । এর প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, তার মধ্যে থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলী আলোচনা করা হলো…

 


আমলকি খাওয়ার উপকারিতা:

 ভিটামিন সি এর ভান্ডার:

আমলকি হলো ভিটমিন সি এর সর্বোৎকৃষ্ঠ্য উৎস । লেবু বা কমলালেবুতে যে পরিমানে ভিটামিন সি পাওয়া যায় তার থেকে ১৫-২০ গুন্ বেশি পরিমানে ভিটামিন সি পাওয়া যায় আমলকিতে ।

সুতরাং প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আমলকি রাখলে, আপনার প্রতিদিন যে পরিমানে ভিটামিন সি প্রয়োজন হয় তার থেকে বেশি পরিমানে ভিটামিন সি আপনি পেয়ে যাবেন ।

 

সর্দি-কাশির বিরুদ্ধে লড়াই:

আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়ে বিভিন্ন ভাইরাল সংক্রমণ থেকে শরীরকে সুরক্ষা প্রদান করে । এই কারণে, দৈনিক আমলকি খেলে আপনার সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও অনেকাংশে কমে যাবে ।

 

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:

আমলকির মধ্যে ফ্লেভানয়েড নামে একধরণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় ।

এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো কোষে কোষে থাকা ফ্রি রেডিক্যাল গুলোকে নষ্ট করে কোষ গুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে । ফলস্বরূপ ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা কমে যায় ।এই ভাবে আমলকি শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ।

 

কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে:

আমলকিতে জলে দ্রবণীয় ফাইবার বা তন্তু প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়, এই কারণে আমলকি হজমশক্তি বাড়ায়, কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় এবং অস্ব বা পাইলস এর সমস্যা থেকেও  মুক্তি দেয় । এছাড়াও দৈনিক আমলকি  বা আমলকির রস খেলে হৃদরোগ ও কোলেস্টেরলের মতো সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় ।

 

ডায়াবেটিসের সমস্যা কমায়:

আমলকির মধ্যে যেহেতু প্রচুর পরিমানে জলে দ্রবণীয় ফাইবার বা তন্তু রয়েছে, তাই আমলকি খেলে তা ধীরে ধীরে হজম হয়, যার জন্যে খাদ্য হজম হওয়ার পরে ধীরে ধীরে glucose এ পরিণত হয় এবং অনেক সময় ধরে ধীরে ধীরে রক্তের সাথে মেশে ও দেহে শক্তি প্রদান করে ।

ফলে রক্তে  হঠাৎ করে গ্লুকোজ এর মাত্রা বাড়ে না, যা ডায়াবেটিস এর রোগীদের জন্যে খুবই লাভদায়ক ।

 

দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে:আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

আমলকিতে যেমন প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি পাওয়া যায় তেমনি তার পাশাপাশি যথেষ্ট পরিমানে ভিটামিন A  পাওয়া যায় । আর ভিটামিন A দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে ও তার পাশাপাশি চোখের চুলকানি, চোখ দিয়ে জল পড়া ইত্যাদি সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয় ।

সুতরাং চোখ সুস্থ্য রাখতে ও দৃষ্টিশক্তি প্রখর রাখতে আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আমলকি অবশ্যই যুক্ত  করুন ।

 

চুলের পরিচর্যা:

চুলের পরিচর্যার ক্ষেত্রেও আমলকির ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে । এটি আয়ুর্বেদশাস্ত্রে একটি মহাঔষধির  মতো ব্যবহার করা হয়ে থাকে । আমলকি নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে, চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, চুলের অকাল পক্কতা রোধ করে,  এমনকি চুল ঝরে যাওয়ার সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয় ।

 

ত্বকের পরিচর্যা:

আমলকি ত্বকের পরিচর্যাতেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে । প্রতিদিন সকালে আমলকির রসের সাথে সামান্য মধু মিশিয়ে খেলে আপনার ত্বক হবে নরম, মসৃন ও উজ্জ্বল । নিয়মিত আমলকি খেলে আপনার ত্বকের বার্ধক্যজনিত বলিরেখা গুলিও কমে যাবে । তাই আপনার ত্বক সুন্দর রাখতে চাইলে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আমলকি অবশ্যই যোগ করুন ।

 

ব্যাথা নাশক:

বহু গবেষণায় এটি প্রমাণিত যে আমলকি একটি ব্যাথানাশক হিসাবে কাজ করে । শরীরের জয়েন্ট গুলোতে যে ব্যাথার উদ্ভব তার উপশমে আমলকি বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ।

 

ওজন হ্রাস:ওজন কমাতে শসার ভূমিকা

লেবুর মতোই আমলকিও ওজন কমাতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে জলে দ্রবণীয় ফাইবার বা তন্তু, সেইকারণে আমলকি খেলে ধীরে ধীরে হজম হয় ও ধীরে ধীরে শক্তি প্রদান করে, ফলে অনেক দেরিতে ক্ষুধা লাগে ।

ফলস্বরূপ সারাদিনে কম পরিমানে খেলেই পেট ভরা অনুভব হয় আর সেইকারণে ওজন ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে ।

 

হৃদরোগ বা স্ট্রোক:

আমলকি রক্তের জমাট বাধার প্রক্রিয়াকে বাধা দেয় ফলে শিরা বা ধমনীর মধ্যে রক্ত জমাট বাধার প্রবণতা কমে যায় । ফলস্বরূপ হার্ট এটাক বা স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পায় ।


 

 

আরও পড়ুন: লেবুর  স্বাস্থ্য উপকারিতা 
আরও পড়ুন : ভিটামিন সি এর উপকারিতা 

 

 

প্রতিটি খাবারেরই যেমন কিছু ভালো দিক থাকে তেমনি তার পাশাপাশি কিছু খারাপ দিকও থাকে । আমলকির এমনই কিছু ক্ষতিকারক প্রভাব আলোচনা করা হলো :

আমলকি যেহেতু রক্তকে জমাট বাঁধতে বাধা দেয় সেইকারণে বেশি পরিমানে আমলকি খেলে আপনার শরীরের স্বাভাবিক রক্ততঞ্চন প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে বা রক্ত জমাট বাঁধতে অসুবিধা হতে পারে ।

এছাড়াও গর্ভবতী মহিলাদেরও আমলকি না খাওয়াই ভালো ।


 

আমলকি কিভাবে খাবেন:

আমলকি বিভিন্ন রকম ভাবে খেতে পারেন – সম্পূর্ণ পুষ্টিগত গুন্ পেতে গেলে এটি কাঁচা বা রস করে খাওয়া ভালো । এটি স্বাদে খুব তেতো, টক ও হালকা মিষ্টি । তাই আমলকি অনেকেই কাঁচা বা রস করে খেতে পছন্দ করেন না ।

এটা অন্যান্য সবজির সাথেও স্যালাড হিসাবে খেতে পারেন, সবজির সাথে রান্না করে খেতে পারেন, এর চাটনি বানিয়েও খখেতে পারেন ।

এছাড়াও এখন আমলকি বাজারে পাউডার, ক্যাপসুল ও তেল হিসাবেও পাওয়া যায় । আমলকির তেল প্রধানত চুলের পরিচর্যা তে ব্যবহার করা হয় এবং পাউডার ও ক্যাপসুল ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা হয় ।

 

 

আরও পড়ুন: খুব সহজেই পেটের মেদ কমান 

 


এক কথায়: আমলকি ভিটামিন সি এর উত্তম উৎস।। সর্দি-কাশির বিরুদ্ধে লড়াই করে।। ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ।। কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে ।। ডায়াবেটিসের সমস্যা কমায় ।। দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে ।। চুল ও ত্বকের জন্যে উপকারী ।। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ।। ব্যাথানাশক হিসাবে কাজ করে ।। ওজন কমাতে সাহায্য করে ।। হার্ট ভালো রাখে ।।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d