লেবুর উপকারিতা

লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা

ওজন কামানো থেকে শুরু করে শরীরকে ডিটক্সিফাই করাতে লেবুর উপকারিতা যে কতটা রয়েছে সেটা কমবেশি সবাই জানেন । সকালে উঠে এক গ্লাস ঈষদুষ্ণ জালের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে ওজন কমাতে যেমন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে  তেমন খাবারের সাথে এক টুকরো লেবু চিপে নিলে খাবারের স্বাদও অনেকগুণে বৃদ্ধি করে, অনেকে তো আবার সকালের চা বা কফির বিকল্প হিসাবেও লেবুজল পান করতে পছন্দ করেন ।

 

এছাড়াও লেবুর আরও বিশেষ কিছু উপকারী গুন্ রয়েছে যেগুলো আপনি হয়তো জানেন না, যদি না জানেন তাহলে আসুন আজ সেই সব উপকারী গুনগুলির বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জেনে নিন। …

 


 

লেবুর উপকারিতা (Benefits of lemon):

১) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:

লেবুতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি থাকে, আর এই ভিটামিন সি মানুষরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে । তাই প্রতিদিন যদি অন্ততপক্ষে একটি করে লেবু খান তাহলে আপনাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেটাই বেড়ে যাবে ফলে বিভিন্ন ভাইরাল জ্বর ও সংক্রমণের হাত থেকে সহজেই রক্ষা পাবেন ।

এছাড়াও লেবুতে থাকা ভিটামিন সি উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, এমনকি স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকিও অনেকটা কমিয়ে দেয় ।

 

 

লেবুর উপকারিতা২) ত্বক সুন্দর রাখে :

লেবুতে রয়েছে  প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা রক্তকে পরিষ্কার রাখে অর্থাৎ রক্ত থেকে খারাপ ও বিষাক্ত রাসায়ানিক পদার্থ গুলোকে বাইরে বের করে দেয় । যার ফলে ত্বক হয় সুন্দর ও উজ্জ্বল ।

 

তাই নিয়মিত লেবুজলে পান করলে লক্ষ্য করবেন যে, আপনার ত্বক থেকে কালো বলিরেখা গুলো ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাচ্ছে ও তার পাশাপাশি ত্বকের শুস্কতা কমে গিয়ে ত্বক হয়েছে কোমল ও মসৃন ।

 

 

৩) কিডনি ভালো রাখে :

নিয়মিত লেবু খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায় । লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে সাইট্রিক অ্যাসিড যা কিডনিতে পাথর তৈরী হতে দেয় না, আর পাথর তৈরী হয়ে গেলেও সেটাকে ভেঙে দিয়ে মূত্রের মাধ্যমে শরীরের বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে ।

তাই কিডনি সুস্থ্য রাখতে সম্ভব হলে প্রতিদিন সকালে পর্যাপ্ত পরিমানে লেবুজল পান করুন ।

 

 

৪)  শরীরে জলের ভারসাম্য বজায়(Hydrate) রাখে:

দেখুন আপনার দেহকে শুস্ক হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে গেলে, প্রতিদিন যে পর্যাপ্ত পরিমানে জল খেতে হবে এটা আপনি হয়তো  জানেন কিন্তু জেনেও হয়তো আপনি যথেষ্ট পরিমানে জল পান করতে পারছেন না ।

কারণটা হলো জলের তো কোনো নিজস্ব স্বাদ নেই তাই শরীরের উপকারের কথা ভেবেও অতিরিক্ত পরিমান জল পান করা সম্ভব হয়ে ওঠে না ।

 

কিন্তু সেই জলের সাথে যদি এক টুকরো লেবু চিপে নিতে পারেন তাহলেই সোনায় সোহাগা…! না না মজা করছি না – কারণ জলে লেবুর রস মিশিয়ে নিলে লেবুর উপকারিতা গুলোর পাশাপাশি জলের স্বাদও বেড়ে যাবে,ফলে অতিরিক্ত পরিমান জল পান করতেও আর অসুবিধা হবে না ।

ফলে শরীরে জলের ভারসাম্যও বজায় থাকবে  আর লেবুর উপকারী গুনগুলিও পেয়ে যাবেন ।

 

 

৫) এনিমিয়া বা রক্তাল্পতা রোধ করে :

লেবুতে পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন সি থাকার পাশাপাশি সামান্য পরিমানে আয়রনও থাকে । লেবুতে থাকা ভিটামিন সি আমাদের শরীরের অন্যান্য খাদ্য গুলো থেকে আয়রন শোষণ করে, আর এই শোষিত আয়রন ও লেবুতে থাকা আয়রন রক্তের লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে । ফলে শরীরে রক্তের অভাব হয় না ।

এইভাবে, লেবু অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা রোগ প্রতিহত করতেও সহায়তা করে ।

 

 

৬) ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:

লেবু ভিটামিন সি তে পরিপূর্ণ থাকার পাশাপাশি লেবুতে ফ্লেভানয়েড (Flavonoid) নামে একধরনের এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরে উৎপন্ন হাওয়া ফ্রি রেডিক্যাল গুলোকে নিউট্রিলাইজ করে বা বাইরে বের করে দিয়ে শরীরের কোষ গুলোকে নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচায় । ফলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

এইকারণে, নিয়মিত লেবুজল পান করলে আপনার শরীরে ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা অনেকটা কমে যাবে ।

 

 

৭)দেহে Ph এর  সমতা বজায় রাখে:

শরীরে অ্যাসিডেব় মাত্রা বেড়ে গেলে রোগব্যাধি হওয়ার সম্ভবনাও বেড়ে যায় । লেবু বাস্তবে অ্যাসিড প্রকৃতির হলেও, খাওয়ার পরে আমাদের শরীরে ক্ষারীয় প্রকৃতির আচরণ করে । তাই শরীরে অ্যাসিডেব় মাত্রা বেড়ে গেলে… লেবু খেলে, খাওয়ার পরে এর ক্ষারীয় প্রকৃতির জন্যে অ্যাসিডেব় মাত্রাটা কমে গিয়ে অ্যাসিড ও ক্ষারের সমতা বজায় থাকে, ফলে শরীরে রোগব্যাধি হওয়ার সম্ভবনাও কমে যায় ।

এইভাবে লেবু শরীরে  Ph  এর সমতা বজায় রেখে শরীরে রোগ প্রতিরোধ করে ।

 

৮) ব্যাথা উপসম করে:

শরীরের জয়েন্টএ জয়েন্টএ ইউরিক অ্যাসিডেব় মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে যে ব্যাথ্যা অনুভব হয় তার থেকে মুক্তি পাওয়ারও আর একটি কার্যকরী উপায় হলো লেবু, কারণ লেবু খাওয়ার পরে, সেটা শরীরের মধ্যে ক্ষারের (alkaline ) মতো আচরণ করে এবং জয়েন্ট গুলো থেকে ইউরিক অ্যাসিড কে প্রশমিত করে দেয় অর্থাৎ ইউরিক অ্যাসিড এর পরিমান কমিয়ে দিয়ে জয়েন্টের ব্যাথা কমায় ।

এইকারণে  প্রতিদিন লেবুজল পান করলে আপনার জয়েন্টের ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন ।

 

 

ওজন কমাতে শসার ভূমিকা৯) ওজন কমাতে সাহায্য করে:

লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে জলে দ্রবণীয় পেক্টিন তন্তু ।

সেইকারণে প্রতিদিন লেবুজলে পান করলে আপনার অল্প খেলেই পেট ভড়া অনুভূত হবে এবং আপনার ক্ষুধা কমে যাবে, যা আপনার ওজন কমানোর পথে অত্যান্ত কার্যকরী হবে ।

 

 

১০) হার্ট ও ব্রেন সুস্থ্য রাখে :

লেবুতে ভিটামিন সি এর পাশাপাশি, প্রচুর পরিমানে পটাসিয়াম খনিজ থাকে যা আপনার হার্ট ও ব্রেন কে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে এবং তাদের কার্জকারিতাকেও সঠিকভাবে চলতে সাহায্য করে ।

 

 

১১) কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে :

পূর্বেই আলোচনা করা হলো যে লেবুর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পেক্টিন তন্তু বা ফাইবার । এই পেক্টিন তন্তু আবার  হজমশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে , কোষ্টকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয় এছাড়াও কোলেস্টেরলের সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয় ।

 

 

১২) খাদ্যকে সুস্বাদু করে:

লেবুর বিশেষ স্বাদ ও গন্ধ যে কোনো খাবার কে আরো সুস্বাদু করে তোলে । তাই কোনো খাবারের স্বাদ তেমন ভালো না হলেও সেই খাবারে যদি একটু লেবুর রস দিয়ে মিশিয়ে দেওয়া যায় তাহলে খাবারটি খেতেও ভালো লাগে আর হজমও ভালো হয় ।

 

 

১৩) মুখের দুর্গন্ধ দূর করে:

পেঁয়াজ বা রসুন জাতীয় কোন তীব্র গন্ধের খাবার বা অন্য কোনো তীব্র গন্ধের খাবার খেলে, মানে ওই ধরনের খাবার গুলো খেলে দীর্ঘ সময় যাবৎ মুখ দিয়ে ওই খাবারের গন্ধই বেরোতে থাকে, যা খুবই অস্বস্তিকর ! ওই পরিস্থিতিতে যদি এক টুকরো লেবু বা লেবু জল পান করা যায় তাহলে ওই খাবারের তীব্র গন্ধটা তো চলেই যাবে তার সঙ্গে মুখ দিয়ে একটা সুন্দর গন্ধ বের হবে যা আপনাকে খুব সতেজ অনুভব করাবে ।

 

 

১৪) খনিজ লবণের সমতা বজায় রাখে :

দৌড়ানোর সময় বা অনেক্ষন ধরে ব্যায়াম করার সময় শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে যথেষ্ট পরিমানে খনিজ লবন বেরিয়ে যায় । তখন শুধু জল না খেয়ে, তার সাথে যদি কিছু পরিমানে লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে পান করা যায়, তাহলে সেই খনিজ লবণের ঘাটতি অনেকটা পূরণ হয়ে যায় ।

কারণ লেবুতে পটাসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,ক্যালসিয়াম, আয়রনের মতো ইত্যাদি খনিজ লবন যথেষ্ট পরিমানে পাওয়া যায়।

 

 

১৫) স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে:

লেবুর উপকারিতাযেহেতু লেবু ভিটামিন সি তে পরিপূর্ণ, তাই নিয়মিত লেবুজল পান করলে আপনার দাঁতের মারি সুস্থ থাকবে আর কোনো ইনফেকশনও হবে না । কারণ ভিটামিন সি আপনার দাঁতের মাড়িকে সুস্থ্য রাখবে।

তারফলে স্কার্ভি রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায় ।

 

 

১৬) মুড ভালো রাখে:

গবেষণায় দেখা গেছে যে, লেবুতে থাকা বিশেষ তত্ব মানুষের মানসিক চাপ ও অবসাদ কে কমিয়ে দেয় । তাই প্রতিদিন লেবুজল পান করলে, আপনার মানসিক চাপ কমে গিয়ে নিজেকে খুব হাসি খুশি ও সতেজ অনুভব করবেন ।

 

 

আরও পড়ুন: লেবুর উপকারিতা(Benefits of lemon)

 

 


আচ্ছা, এতক্ষণ তো আপনি লেবুর উপকারিতা গুলো জানলেন কিন্তু একটা কথা হয়তো আপনি অব্যশই শুনেছেন যে কোনোকিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়, এই ক্ষেত্রেও একই শর্ত প্রযোজ্য – লেবু পর্যাপ্ত পরিমানে খেলে যেমন অমৃত সমান কাজ করে তেমন অতিরিক্ত পরিমানে খেলে এর কিছু পার্শপ্রতিক্রিয়াও দেখা যায় –বাস্তবে অতিরিক্ত পরিমান লেবু খাওয়ার ফলে তেমন মারাত্মক কিছু পার্শপ্রতিক্রিয়া (side effects) দেখা যায়নি, তবুও যেই সমস্যা গুলো হতে পারে সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো …..

 

লেবুর কিছু অপকারী গুন:

১) লেবু সরাসরি খাবেন না অর্থাৎ খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন বা হালকা গরম জলের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। যদি আপনি সরাসরি লেবু খান তাহলে লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড সরাসরি আপনার দাঁতের সংস্পর্শে এসে আপনার দাঁতের এনামেল কে নষ্ট করে দেবে, যার ফলে আপনার দাঁত ক্ষয় হতে শুরু করবে এছাড়াও আপনার দাঁতের সেনসেশনের সমস্যা দেখা দেবে ।

 

২) যাদের গ্যাস বা অম্বলের সমস্যা আছে তাদের লেবু না খাওয়াই ভালো । কারণ, দেখা গেছে যে, যাদের গ্যাস বা অম্বলের সমস্যা আছে , তারা লেবু খেলে তাদের সেই সমস্যা আরো বেড়ে গিয়েছে । তাই তাদের লেবু না খাওয়াই ভালো ।

 

৩) বেশি পরিমানে লেবুজল পান করলে আপনার ঘন ঘন প্রসাব পেতে পারে আর বেশি পরিমানে প্রসাবের ফলে মূত্রের মাধ্যমে কিছু পরিমান খনিজ লবন আপনার শরীরের বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে। তাই লেবুর উপকারিতা গুলো পেতে হলে চেষ্টা করবেন পরিমিত পরিমানে লেবুজল পান করার।

 


সুতরাং, আশা করছি যে আপনি লেবুর উপকারিতা গুলো সম্বন্ধে এতক্ষণে একটা সুস্পট ধারণা পেয়ে গেছেন । তবে মনে রাখবেন, যদি আপনার কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে, আর আপনি যদি প্রাকৃতিক উপায়ে লেবুর উপকারিতা গুলি পেতে চান তাহলে, তার আগে অবশ্যাই একবার ডক্টরের পরামর্শ নিন ।

 

আর্টিকেল টি পড়ার জন্যে, আপনাকে ধন্যবাদ !

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d