প্রাচীন কাল থেকেই ব্যবহৃত ভেষজ উদ্ভিদ গুলির মধ্যে নিম এক অন্যতম স্থানে রয়েছে । নিম গাছ সাধারণত ক্রান্তীয় অঞ্চলগুলোতে দেখা যায়, যেমন ভারত, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় নিম গাছ পাওয়া যায় । নিম গাছের পাতা , কান্ড , বাকল, ফল , মূল প্রতিটি অংশেরই সমান গুরুত্ব আছে তবে নিম গাছের পাতাটাই বেশি পরিমানে ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।
প্রায় তিন থেকে চার হাজার বছর ধরে ভারতীয় উপমহাদেশে এই নিম গাছের বিভিন্ন অংশগুলি ঔষধি হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে । বিভিন্ন প্রাচীন সাহিত্যে নিমকে সর্বরোগ নির্মুলকারী বলা হয়েছে অর্থাৎ নিম সবরকম রোগ প্রতিরোধে সক্ষম ।
ত্বকের পরিচর্যা, সৌন্দর্য রক্ষায়,সর্দিকাশি ,জ্বর , বিভিন্ন সংক্রমণ, কিডনি, লিভার ইত্যাদির সমস্যায় নিম পাতা বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।
তথ্য তালিকা:
নিম পাতার উপকারিতা :
ত্বকের পরিচর্যায় নিম পাতা:
আবহাওয়ার পরিবর্তন, খাদ্য তালিকার হেরফের বা শরীরের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সমস্যার জন্যে ব্রণ, ব্ল্যাক হেডস, হোয়াইট হেডস বা বয়সের ছাপ ইত্যাদি সমস্যা গুলো দেখতে পাওয়া যায় । এই সব সমস্যা গুলি থেকে মুক্তি পেতে আপনি নিম পাতার ফেস প্যাক ব্যবহার করতে পারেন, কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন E, যা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে ।
নিম পাতার পেস্ট হলুদের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ব্রণ ও যে কোনো দাগ কমে গিয়ে ত্বককে করে পরিষ্কার ও সুন্দর । এছাড়াও ত্বকের বিভিন্ন চুলকানি, খোস পঁচড়া ইত্যাদি থেকে মুক্তি পেতে নিম পাতা সিদ্ধ জলে স্নান করতে পারেন, এতেও উপকার পাবেন ।
চুল পরিচর্যায় নিম পাতা:
ত্বকের পাশাপাশি চুলের পরিচর্যাতেও নিম পাতার সমান গুরুত্ব রয়েছে । নিম পাতার রস নিয়মিত নিয়ম করে চুলে নিলে চুলের যাবতীয় সমস্যা দূর হয়ে চুল হয় সুস্থ্য ও সুন্দর ।
নিমের মধ্যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট থাকার কারণে নিম পাতার পেস্ট করে চুলে লাগালে এটি চুলের খুশকি দূর করে , চুলের অকাল পক্কতা রোধ করে, চুল পড়া রোধ করে ও চুলে উকুন হতে দেয় না । এছাড়াও নিম তেল ব্যবহার করলেও প্রচুর উপকার পাওয়া যায় ।
জ্বর নাশক :
নিম পাতা জ্বর নাশক হিসাবেও কাজ করে । নিম পাতার মধ্যে রয়েছে লিমোনোয়েড নামে একপ্রকারের যৌগ যা ম্যালেরিয়ার জীবাণুকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে ।
তবে বর্তমানে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ধ্বংস করতে নিম পাতার ব্যবহার অনেকটাই কমে গিয়েছে, এখন তার পরিবর্তে ক্লোরোকুইন নামক একপ্রকারের ঔষধ ব্যবহার করা হয় ।
আরও পড়ুন: সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা
রক্ত পরিষ্কার ও এলার্জি প্রতিরোধ:
নিম পাতা খেলে রক্ত পরিষ্কার রাখে ও তার পাশাপাশি এলার্জি প্রতিরোধ করে । শরীরে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দিয়ে হৃদপিণ্ডের গতি স্বাভাবিক রাখে ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে ।
নিম পাতা জলে ফুটিয়ে বা সিদ্ধ করে সেই জল দিয়ে স্নান করলে এলার্জির সমস্যা অনেকটা কমে, এছাড়াও নিম পাতা কাঁচা হলুদের সাথে বেটে শরীরে লাগলেও এলার্জি অনেকাংশে কমে যায় ।
ক্যান্সার ও জন্ডিস প্রতিরোধ:
নিম পাতায় এক বিশেষ ধরনের যৌগ রয়েছে যা আমাদের শরীরের ক্যান্সার ও টিউমারের কোষ গুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে । এছাড়াও জন্ডিস রোগ হলেও নিয়মিত নিম পাতা সেবনে আরোগ্য লাভ করা যায় ।
কৃষিকাজে নিম পাতা:
আজকাল বিজ্ঞান প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে কৃষিকাজেও নিম পাতার বহুল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় । কৃষিজমির উর্বরশক্তি ও ফলন বাড়ানোর জন্যে আজকাল নিম পাতার তৈরী জৈব সারও ব্যবহার করা হচ্ছে ।
আরও পড়ুন: ওজন কমাতে শসার ভূমিকা
নিম পাতার অন্যান্য ব্যবহার:
মানুষের অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতির কারণে বদহজম, অম্বল, বুকজ্বলা ইত্যাদি সমস্যা গুলো প্রতিনিয়ত লেগেই আছে, নিম পাতায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা এইসব সমস্যাগুলোর সমাধানে সক্ষম ।
এছাড়াও কৃমিনাশক, ঠাণ্ডাজনিত কারণে বুক ব্যাথা, চিকেন পক্স , দাঁত ব্যাথা, পোকা মাকড় কামড়ের ব্যাথা ইত্যাদি রোগে নিম পাতার ব্যবহার বহুল প্রচলিত ।
কিভাবে খাবেন:
যেহেতু নিম পাতা খুব তেঁতো, তাই শুধু নিম পাতা খেতে না পারলে অন্য খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন বা নিম পাতার পেস্ট বানিয়ে সেটা দিয়ে ছোটো ছোটো বড়ি বানিয়ে রাখতে পারেন, যেটা আপনি প্রতিদিন জল দিয়ে গিলে খেতে পারেন ।
আরও পড়ুন: আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
সতর্কতা:
আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগের কারণে চিকিৎসাধীন থাকেন তাহলে নিম পাতা না খাওয়াই ভালো, কারণ ডায়াবেটিসের ঔষধ রক্তের সুগারের মাত্রা কমিয়ে দেয় আবার অন্যদিকে নিম পাতাও রক্তে সুগারের মাত্রা কমিয়ে দেয় , যার জন্যে আপনার শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাই নিম পাতা খাওয়ার আগে একবার অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন ।
আবার নিম পাতার পেস্ট ত্বকে সরাসরি না লাগিয়ে অন্য কোনো দ্রব্যের সাথে মিশিয়ে লাগান । সরাসরি লাগালে ত্বক জ্বালা করতে পারে ।