বর্তমান যুগে ওজন কমানোটা একটা চ্যালেন্জিং বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । তবে আপনি যদি ওজন কমানোর উপায় গুলো সঠিক ভাবে অনুসরণ করেন, তাহলে হয়তো সপ্তাহে হাফ কেজি থেকে ১ কেজির মতো ওজন কমাতে পারবেন । আর যদি শুধু না খেয়ে ওজন কমাতে চান তাহলে ওজন তো কমবেই না উল্টো বেড়ে যাবে বা যদি কমেও যায় তাহলে শরীরের অভ্যান্তরিন ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যাবে ।
সুতরাং ওজন কমাতে গেলে যেমন পুষ্টিকর খাবার ও বিভিন্ন নিয়মাবর্তীতা গুলো মানতে হবে ঠিক তেমনি তার পাশাপাশি ভালো ফল পাওয়ার জন্যে শারীরিক পরিশ্রমও করতে হবে ।
এমনটা নয় যে শারীরিক পরিশ্রম না করলে ওজন কমবে না, কমবে কিন্তু একটু দেরিতে । আপনি যদি তাড়াতাড়ি সুফল পেতে চান তাহলে আপনাকে খাদ্য ও নিয়মাবর্তীতার পাশাপাশি শারীরিক পরিশ্রমও করতেই হবে ।
আমি ওজন কমানোর যেসব উপায় গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, সেগুলো যদি আপনি অনুসরণ করতে পারেন তাহলে আপনি মোটামুটি ৩০ দিনের মধ্যেই ফলাফল দেখতে পাবেন। …
তথ্য তালিকা:
ওজন কমানোর উপায়:
কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা:
সর্বপ্রথমে আপনার খাবারের তালিকার মধ্যে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে ।
সরল শর্করা গুলিকে খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে । পুরোপুরি ভাবে না হলেও বেশিরভাগটাই বাদ দিতে হবে এবং তার পরিবর্তে খাদ্য তালিকায় যোগ করতে হবে জটিল শর্করা ।
[ সরল শর্করা -সাদা চাল, ময়দা, সাধারণ আলু, চিনি, গুড়, সফ্ট ড্রিংক,চকোলেট, বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ইত্যাদি ।
জটিল শর্করা– বাদামি চাল, গমের আটা, ছাতু, ওটস ইত্যাদি।]
উপরের দেওয়া তালিকাটি পড়লে আশা করি সরল শর্করা ও জটিল শর্করা সম্বন্ধে আপনার একটি স্পষ্ট ধরানো জন্মাবে । প্রতিটি মানুষ বিশেষ করে আমরা বাঙালিরা প্রতিদিন সরল শর্করাই বেশি পরিমানে খেয়ে থাকি ।
সরল শর্করা খাওয়ার পরে দ্রুত হজম হয়ে রক্তের সাথে glucose রূপে মিশে যায় ও কোষে কোষে গেয়ে শক্তি প্রদান করে । যেহেতু অল্প সময়ের মধ্যে বেশি পরিমানে glucose এর অনু রক্তে মিশে যায় এবং শক্তি প্রদান করার পরে অতিরিক্ত পরিমান glucose ফ্যাটি অ্যাসিড রূপে শরীরে সঞ্চিত হয়ে যায়, যা আপনার শরীরের ওজন বাড়ার অন্যতম কারণ ।
অপরদিকে জটিল শর্করা ধীরে ধীরে হজম হয় ।
[সরল শর্করা হোক বা জটিল শর্করা, সমস্ত শর্করাই হজম হওয়ার পরে glucose এ পরিণত হয় ।]
জটিল শর্করা ধীরে ধীরে হজম হওয়ার ফলে ধীরে ধীরে রক্তের সাথে মিশে দীর্ঘসময় যাবৎ শক্তি প্রদান করে, তাই জটিল শর্করা জাতীয় খাদ্য খেলে ক্ষুধা কম লাগে । ফলে শরীরে ফ্যাটি অ্যাসিড সঞ্চিত হয় না ও ওজন বাড়ার প্রবনতাও কমে যায় ।
তাই যতটা সম্ভব সরল শর্করার পরিবর্তে জটিল শর্করা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখার চেষ্টা করুন ।
আরও পড়ুন: লেবুর স্বাস্থ্য উপকারিতা( Benefits of lemon) |
প্রোটিনের ভূমিকা:
প্রোটিন জাতীয় খাদ্য আপনার ওজন কমানোর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যুক্ত করুন প্রোটিন জাতীয় খাদ্য। ওজন কমানোর যাত্রায় প্রোটিন যেমন আপনার শরীরের মাংসপেশিকে সুরক্ষিত রাখবে তার পাশাপাশি নতুন মাংসপেশি তৈরিতে সাহায্য করবে ফলে সুরক্ষিত উপায়ে শরীরের মাংসপেশিকে না কমিয়ে, আপনার শরীরের সঞ্চিত ফ্যাটকে কমাতে পারবেন । এইভাবে আপনার শরীরের ওজন কমাতে পারবেন ।
কিছু উচ্চ মানের প্রোটিন জাতীয় খাবারের উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো :
মিষ্টি জলের মাছ বা সামুদ্রিক মাছ,
মাংস ( পোল্ট্রি, খাসি ইত্যাদি ),
ডিম্
ডাল ( মসুর ডাল, মগ ডাল, ইত্যাদি ),
সয়াবিন,
ছোলা,
পনির(দুধ থেকে তৈরী),
টফু (সয়াবিন থেকে তৈরী) ইত্যাদি ।
ফল ও শাক-সবজি :
সম্ভব হলে প্রতিদিন প্রচুর পরিমানে শাক-সবজি খেতে পারেন কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার বা তন্তু যা আপনার শরীরের সঠিক পুষ্টির জন্যে অত্যান্ত জরুরি এবং যেটা আপনার ওজন কমানোর যাত্রাকে আরও সুগম করবে ।
শুধু তাই নয় শাক-সবজি তে প্রচুর পরিমানে তন্তু থাকার জন্যে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দূর হয়ে যাবে । এছাড়া শাক- সবজিতে কম ক্যালোরি থাকার জন্যে আপনি বেশি করে সবজি খেলেও সেখান থেকে কম ক্যালোরি আপনার শরীরে যুক্ত হবে এবং যদি অতিরিক্ত পরিমান ক্যালোরির দরকার হয় তাহলে শরীর সেটা, আপনার শরীরের সঞ্চিত ফ্যাট থেকে গ্রহণ করবে । এইভাবে আপনার শরীরের ফ্যাট ধীরে ধীরে কমতে থাকবে ও আপনার শরীরের ওজনও কমতে থাকবে ।
[ ক্যালোরি বলতে এখানে আপনার শরীরে ব্যবহৃত শক্তির পরিমাণকে বোঝানো হয়েছে ]
ফ্যাটের গুরুত্ব:
ফ্যাট বা তৈল জাতীয় খাবারও ওজন কমানোর ক্ষেত্রে অন্যান্য খাদ্য উপাদানের মতোই একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । তবে ফ্যাট এর মধ্যেও কিছু প্রকারভেদ রয়েছে – ভালো ফ্যাট ও মন্দ ফ্যাট ।
ভালো ফ্যাট আপনার হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কের জন্যে অত্যান্ত জরুরি । তাই ওজন কোনাতে গিয়ে যাতে আপনার হৃৎপিণ্ড বা মস্তিষ্কের কোনো ক্ষতি না হয় তার জন্যে এই ধরণের ফ্যাট গুলো আপনার খাদ্য তালিকায় রাখা অত্যান্ত জরুরি ।
কিছু ভালো ফ্যাট এর উৎস – জলপাই তেল, নারিকেল তেল, বাদাম তেল, সূর্যমুখী তেল ইত্যাদি ।
তবে মন্দ ফ্যাট একটি নির্দিষ্ট লিমিটের মধ্যে খাবেন তা নাহলে কোলেস্টেরলের মতো সমস্যা হতে পারে । কিছু মন্দ ফ্যাট এর উৎস হলো -মাখন, ঘি, হাইড্রোজেনেটেড অয়েল ( বনস্পতি), ডিমের কুসুম ইত্যাদি
ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম:
ব্যায়াম করাটা আবশ্যক নয় তবে আপনি যদি উপরের উপায় গুলো অনুসরণ করার পাশাপাশি একটু শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম বা সকালে উঠে দৌড়াতে পারেন তাহলে আপনি দ্রুত ফলাফল দেখতে পাবেন ।
আরও পড়ুন: পেটের মেদ বা ভুরি কমানোর উপায় |
ঘুম:
উপরে বর্ণিত উপায়গুলো অবলম্বন করার পরেও যদি আপনি প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমোতে না পারেন তাহলে ফলাফল তো পাবেন ই না তার পরিবর্তে আপনার শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
তাই প্রতিনদিন পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমান আর উপরে বর্ণিত উপায় গুলো অনুসরণ করুন, দেখবেন ফলাফল অবশ্যই পাবেন ।
এক কথায়: শর্করা কম খান বা তার পরিবর্তে জটিল শর্করা খান।। প্রোটিন জাতীয় খাবার প্রতিদিন খান ।। খাদ্য তালিকায় শাক-সবজি বেশি করে যুক্ত করুন ও ভালো ফ্যাটও প্রতিদিনের তালিকায় রাখুন ।। সম্ভব হলে শারীরিক পরিশ্রম করুন ও পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমান ।।