ওজন কমাতে শসার ভূমিকা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা কম বেশি সবাই জানে । শসা খেতেও মন্দ নয় এমনকি যারা শসা খেতে পছন্দ করেন না তারাও ওজন কমানোর কথা মাথায় রেখে এটা খেয়ে নেন । ওজন কমানোর পাশাপশি দেহে জলের সমতা বজায় রাখে, কনস্টিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। এছাড়াও শসার আরও অনেক উপকারী গুন্ আছে ।
শসাতে ক্যালোরি খুব কম থাকে এবং জলের পরিমাণ বেশি থাকে, প্রায় ৯৫ শতাংশ জল থাকে । এছাড়াও এতে যথেষ্ট পরিমানে ভিটামিন K এবং পটাসিয়ামের মতো খনিজ লবন থাকে ।
তথ্য তালিকা:
একটি ৩০০গ্রাম ওজনের শসাতে উপস্থিত পুষ্টি উপাদান:
শক্তি/ ক্যালোরি | ৪৫ |
কার্বোহাইড্রেট | ১১ গ্রাম ( প্রায় ) |
প্রোটিন | ২ গ্রাম ( প্রায় ) |
ফ্যাট | নেই বললেই চলে |
ফাইবার | ২ গ্রাম ( প্রায় ) |
ভিটামিন সি | দৈনিক দরকারের ১৪ % থাকে |
ভিটামিন K | দৈনিক দরকারের ৬২ % থাকে |
ম্যাগনেসিয়াম/ Mg | দৈনিক দরকারের ১০ % থাকে |
পটাসিয়াম / K | দৈনিক দরকারের ১৩ % থাকে |
ম্যাঙ্গানিজ /Mn | দৈনিক দরকারের ১২% থাকে |
যেহেতু শসাতে ক্যালোরি খুব কম পরিমানে থাকে তাই ওজন কমানোর জন্যে অনেকেই শসাকেই প্রথম বিকল্প হিসাবে বেছে নেন । আবার অনেকের মধ্যে এমন একটা ধারণা আছে যে, শুধুমাত্র শসা খেয়েই ওজন কমিয়ে ফেলা যায়, যেটা একদম ভুল ধারণা। দীর্ঘদিন ধরে শুধুমাত্র শসা খেয়ে থাকলে ওজন কমলেও বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
কারণ শসাতে ক্যালোরি খুব কম পরিমানে থাকে তাই ওজন কমানোর জন্যে শুধুমাত্র শসা খেলে শরীরে পর্যাপ্ত শক্তির অভাব দেখা দেবে যার জন্যে শারীরিক দুবলতা দেখা দিতে পারে ।
শুধু শসা দীর্ঘদিন ধরে খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলোর অভাব দেখা দিতে পারে। তাই পুষ্টিবিদেরা ওজন কমানোর জন্যে সবসময় বিভিন্ন রকমের রঙ্গিন শাক-সবজি ও ফলমূলের সাথে মিশিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন যাতে সবরকম পুষ্টি উপাদান গুলো ঐসব খাদ্য গুলো থেকে পাওয়া যায়।
এছাড়াও দীর্ঘদিন যাবৎ শুধুমাত্র শসা খেলে গ্যাস, অম্বল ও শারীরিক দুর্বলতার মতো বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে । সেইকারণে, দীর্ঘদিন যাবৎ শুধু শসা না খেয়ে অন্যান্য খাবারের সাথে সেটা মিশিয়ে খাওয়া ভালো ।
আরও পড়ুন: খুব সহজেই পেটের ভুরি কমিয়ে ফেলার উপায় |
সঠিক ও বিজনসম্মত উপায়ে যদি আপনি শরীরের ওজন কমাতে চান তাহলে, সবসময় একটি আদর্শ খাদ্য তালিকা অনুসরণ করুন এবং সেই তালিকায় শসা যোগ করুন । আপনি খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন বা স্যালাড বানিয়েও খেতে পারেন, ফলে আপনার খাবারের স্বাদও বৃদ্ধি করবে আর পাশাপাশি খাবারের ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ করাও সুবিধা হবে ।
এবার আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে শসা কিভাবে ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ করে ! তাহলে আজ জেনে নিন যে শসা কিভাবে শরীরে ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ করে – শসা এমন একটা ফল যাতে প্রায় ৯৫ শতাংশ জল থাকে ও ক্যালোরিও খুব কম থাকে, তাই খাবারের সাথে শসা খেলে পেটও ভরে যায় ও ক্যালোরিও শরীরে কম যুক্ত হয় ।
আবার শসাতে যথেষ্ট পরিমানে তন্তু বা ফাইবার পাওয়া যায়, তাই খাবারের সাথে শসা খেলে অনেক্ষন পেট ভরা অনুভব হয় ও ক্ষুধা কম লাগে, যার ফলে বার বার খেতে হয় না, ফলস্বরূপ ওজন কমানোর প্রক্রিয়াটা আরও সহজতর হয়ে ওঠে ।
অতএব, ওজন কমাতে শসার ভূমিকা কতটা তাৎপর্যপূর্ণ, আশা করি সেই বিষয়ে আপনার মধ্যে একটি সুস্পষ্ট ধারণা হয়ে গিয়েছে ।
শসা কিভাবে খাবেন:
প্রতিদিন সকালে একটু ব্যায়াম বা দৌড়ানোর পরে শসার জুস্ বানিয়ে খেতে পারেন আর সেটা না পারলে স্যালাড করে কোনো প্রোটিন জাতীয় খাবার ও অন্যান্য ফলমূল সহযোগে খেতে পারেন । একই ভাবে দুপুরের ও বিকেলের বা রাত্রের খাবারের সাথেও স্যালাড বানিয়ে খেতে পারেন । তবে সবসময় একটা বিষয় মাথায় রাখবেন যে, শসার পাশাপাশি আপনার প্রত্যেকবারের খাদ্য তালিকাও যেন হয় ওজন কমানোর পক্ষে উপযোগী ।
শসার স্বাস্থ্য উপকারিতা:
শসার মধ্যে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, সেসব বিষয়ে জানা না থাকলে, জেনে নিন। …
১)জলের সমতা বজায় রাখে:
প্রচন্ড গরমে বা অনেকসময় খুব বেশি ব্যায়াম করার পরে শরীরে জলের অভাব দেখা দেয় তখন এক গ্লাস শসার জুস্ বা শসার স্যালাড খেলে সেই জলের ঘাটতি অনেকটাই পূরণ হয়ে যায় কারণ শসাতে প্রচুর পরিমানে জল থাকে, প্রায় ৯৫ শতাংশ । তাই শসা খেলে শরীরে জলের অভাব হয় না অর্থাৎ শসা শরীরে জলের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে ।
২) কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে:
কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ হলো খাদ্যে জল ও তন্তুর অভাব । শসাতে যথেষ্ট পরিমানে জল থাকে ও যথেষ্ট পরিমানে তন্তু বা ফাইবারও থাকে যা শরীরের ক্ষুদ্রান্ত ও বৃহদন্তকে পরিষ্কার করে কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের মতো সমস্যা গুলোকে দূর করে ।
৩) হজমশক্তি বৃদ্ধি করে:
আপনার যদি হজমের সমস্যা থাকে তাহলে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শসা যোগ করুন তাহলে আপনার হজমশক্তি অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে ।
৪) ওজন কমাতে সহায়তা করে:
ওজন কমাতে শসার ভূমিকা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ । এতে প্রচুর খুব কম পরিমানে ক্যালোরি থাকে তাই বেশি শসা খেয়েও ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়, তাছাড়া এতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমানে আঁশ বা তন্তু ফলে ধীরে ধীরে হজম হয় ও ধীরে ধীরে শক্তি প্রদান করে । তাই কম ক্ষুধা লাগে এবং দেরিতে ক্ষুধা লাগে । এরফলে শরীরের ওজনও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে ।
৫)রোগব্যাধি থেকে মুক্তি দেয়:
শসাতে প্রচুর পরিমানে এন্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়, যা শরীরে অক্সিডেসন হতে দেয় না এবং শরীরে উপস্থিত ফ্রি রেডিক্যাল গুলোকে নষ্ট করে শরীরের বাইরে বের করে দিয়ে রক্তকে পরিষ্কার রাখে ও কোষগুলোকে নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে । এইভাবে ফ্রি রেডিক্যাল গুলোকে নষ্ট করে হৃদরোগ, ফুসফুসের সমস্যা, এমনকি ক্যান্সারের মতো মারণ ব্যাধি থেকে মুক্তি দেয় ।
৬)ত্বক সুন্দর রাখে:
শসাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটমিন A ও ভিটামিন C, এছাড়াও রয়েছে যথেষ্ট পরিমানে খনিজ লবন যা ত্বকের পরিচর্যাতে সহায়তা করে । বিভিন্ন বিউটি পার্লার গুলোতে শসার খোসা বা এর পেস্ট মুখের ত্বকে ব্যবহার করা হয়, মুখের ত্বক পরিষ্কার আর উজ্জ্বল করে তোলার জন্য।
৭) ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ:
শসা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রক হিসাবে জনপ্রিয় । শসাতে উপস্থিত তন্তুর জন্যে খাদ্যের হজম ধীরে ধীরে হয় ও ধীরে ধীরে সুগার রক্তের মধ্যে মেশে কোষে কোষে গিয়ে শক্তি প্রদান করার জন্যে । এইভাবে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিস রোগ অনেকাংশে প্রতিহত করে ।
৮) চুল ও নখের যত্ন:
শসাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে সিলিকা, যা চুল ও নখের সুস্বাস্থ্যের জন্যে একান্ত প্রয়োজন । সিলিকা, চুল ও নখকে মজবুত ও মসৃন রাখতে সহায়তা করে । শুধু খেয়াল রাখবেন যে, খাওয়ার সময় যেন শসার খোসা ফেলে দেওয়া না হয়, কারণ শসার খোসাতেই বেশিরভাগ সিলিকা থাকে এবং অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেল গুলোও শসার খসাতেই বেশি পরিমানে থাকে ।
কিডনির সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রেও শসা বিশেষ ভূমিকা পালন করে ।
আরও পড়ুন: আমলকি খাওয়ার উপকারিতা |
আরও পড়ুন: ৩০ দিনে খুব সহজেই ওজন কমিয়ে ফেলুন |
এক কথায়: শসা খুব কম ক্যালোরিযুক্ত ফল ।। এতে জলের বপরিমান থাকে প্রায় ৯৫ শতাংশ ।। শরীরে জলের সমতা বজায় রাখে ।। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ।। হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ।। ওজন কমাতে সাহায্য করে ।। ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ।। ত্বক সুন্দর রাখে ।। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে ।। চুল ও নখ সুন্দর রাখে ।।
শসার পুষ্টি উপাদান তালিকা: তথ্য সূত্র :healthline.com