সুন্দর চেহারা কে না চায় কিন্তু সুন্দর চেহারার অধিকারী হাওয়া তখনই সম্ভম যখন শরীরটাও সুস্থ্য ও সুন্দর থাকে । পুরুষ হোক বা মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই সৌন্দর্যের একটি অন্যতম চাবিকাঠি হলো সুগঠিত বা পেশীবহুল শরীর কিন্তু এর অন্তরালে বেশিরভাগ সময়েই বাধা হয়ে দাঁড়ায় পেটের মেদ বা ভুরি । আজকাল প্রায় প্রতিটি মানুষের কাছে পেটের মেদ একটা বড়ো সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
এই পেটের মেদ কমাতে পারলে যেমন চেহারা সুন্দর দেখায় ঠিক তার পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের রোগব্যাধি থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় ।
পেটের মেদ কমানোর বিশেষ কিছু উপায় আলোচনা করা হলো, যেগুলিকে আপনি অনুসরণ করলে খুব সহজেই পেটের মেদ বা ভুরি কমিয়ে ফেলতে পারবেন ।
প্রথমেই জানা দরকার, শরীরের অন্যান্য অংশ বাদ দিয়ে শুধুমাত্র পেটের মেদ বা চর্বি কমানো সম্ভব নয় অর্থাৎ পেটের মেদ কমাতে হলে আপনাকে আপনার পুরো শরীরের মেদও কমাতে হবে । নিচে পেটের মেদ কমানোর উপায় গুলো ধাপে ধাপে আলোচনা করা হলো। …
তথ্য তালিকা:
পেটের মেদ কমানোর ঊপায় :
১) লেবুজল:
প্রতিদিন আঁশ বা তন্তু সহ লেবু জল পান করুন যা আপনার শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করবে এবং তার পাশাপাশি লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড আপনার শরীর থেকে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ গুলোকে বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করবে ।
লেবুর উপকারী গুণগুলি সম্পর্কে আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন ।
২) ব্যায়াম:
নিয়মিত সকালে বা বিকেলে দৌড়ান বা পারলে ব্যায়াম করুন । ব্যায়াম করলে আপনার শরীরের মাংসপেশি শক্তিশালী হবে ও পাশাপাশি নতুন মাংসপেশি তৈরী হবে । বিশেষ করে পেটের ব্যায়াম গুলো করলে আপনার পেটের পেশী গুলো শক্তিশালী হবে, যেটা আপনার শরীরের চর্বি তাড়াতাড়ি কমাতে সাহায্য করবে ।
তাই তাড়াতাড়ি ফলাফল পেতে চাইলে প্রতিদিন সকালে দৌড়ান বা ব্যায়াম করুন ।
৩) ডায়েট:
শুধু ব্যায়াম করছেন অথচ সঠিক খাবার খাচ্ছেন না, তাহলে কোনো লাভ হবে না । শরীরের চর্বি কমাতে ব্যায়াম যদি ৩০%(আনুমানিক ) কাজ করে তাহলে ডায়েট ৭০%(আনুমানিক ) কাজ করবে । তাই ব্যায়াম করার পাশাপাশি সঠিক খাদ্য গ্রহণ করাটাও বাঞ্চনীয় ।
প্রোটিন :
মেদ কমানোর জন্যে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করুন যা আপনার পেটের চর্বিকে কমাতে সাহায্য করবে । প্রোটিন আপনার শরীরে চর্বি জমতে বাধা দেবে আর নতুন মাংসপেশি তৈরিতে সাহায্য করবে । আর তার জন্যে যে সমস্ত প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গুলো আপনার দৈনিক খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে সেগুলি হলো….
- মাংস
- মাছ
- ডিম
- whey protein (দুধ থেকে পাওয়া যায় )
- শিম জাতীয় খাদ্য
- সয়াবিন ইত্যাদি ।
কার্বোহাইড্রেট :
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের পরিমান কিছুটা কমিয়ে দিন । বিশেষ করে আমরা বাঙালিরা তো ভাত খাওয়া টা বেশি পছন্দ করি, সেই ভাতের পরিমান টা কিছুটা কমিয়ে দিন কারণ বেশি পরিমানে ভাত বা ওই জাতীয় খাবার খেলে, খাদ্য টা শরীরের কাজে লাগার পরে অবশিষ্ট পরিমান খাদ্য চর্বি হিসাবে শরীরে জমা হয়ে যায় ।
তাই চেষ্টা করুন ভাতের পরিমান টা কমিয়ে দিতে বা তার পরিবর্তে গমের আটার রুটি খেতে কিন্তু সেটাও সীমিত পরিমানে । অনেকে ভাতের পরিবর্তে রুটি খায় কিন্তু দেখা যায় যে সেটা ভাতের থেকেও বেশি পরিমানে খায়, সেটা করলে কিন্তু কোনো ফল পাওয়া যাবে না ।
আর যদি রুটি খেতে না পারেন তাহলে ভাতের পরিমান টা কমিয়ে দিয়ে তার সঙ্গে একটু বেশি পরিমানে সবজি খেতে পারেন, দেখবেন তাতেও ভালো ফল পাবেন ।
ফ্যাট :
অনেককে আবার দেখি চর্বি কমাতে গিয়ে ফ্যাট বা তেল খাওয়া একেবারেই বন্ধ করে দেয় । এই ভুল টা আপনি করবেন না, কারণ আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো যেমন মস্তিস্ক, হৃৎপিন্ড ইত্যাদি এই চর্বি দিয়েই তৈরী যদিও এগুলো অসম্পৃক্ত চর্বি বা Unsaturated fat দিয়ে তৈরী ।
সেজন্যে আপনারা ফ্যাট বা তৈল জাতীয় খাবারগুলো পরিমিত পরিমানে খেতে পারেন । নিচে কিছু ভালো ফ্যাট জাতীয় খাবারের উদাহরণ দেওয়া হলো….
- নারিকেল তেল
- জলপাই তেল ( Olive Oil )
- চীনাবাদাম
- কাজুবাদাম
- তিসি ( flax Seed ) ইত্যাদি ।
ভিটামিন ও মিনারেল:
অন্যান্য খাদ্য উপাদানের মতোই, শরীরকে সুস্থ্য রাখার জন্যে পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন ও মিনারেলও দরকার । তাই যতটা পারবেন প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সবুজ শাক-সবজি ও ফলমূল রাখার চেষ্টা করবেন কারণ এই সব খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন ও মিনারেল পেয়ে যাবেন আর তাছাড়া শাক-সবজি তে ক্যালোরি কম থাকার কারণে এগুলো বেশি পরিমানে খেয়ে সহজেই পেট ভোরে যায় এবং শরীরে ক্যালোরিও কম যুক্ত হয়, যার ফলে আপনার শরীরে অতিরিক্ত চর্বিও জমবে না ।
৪) ফাইবার বা তন্তু জাতীয় খাবার:
পেটের বা শরীরের চর্বি কমানোর জন্যে তন্তু জাতীয় খাবার গুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । তন্তু জাতীয় খাবার গুলো অল্প খেলেই পেট ভোরে যায়, হাজাম শক্তি বাড়ায় ও কোষ্টকাঠিন্যও দূর করে । কিছু তন্তু জাতীয় খাবারের উদাহরণ দেওয়া হলো…
- পালংশাক
- বাঁধাকপি
- গাজর
- বিট
- আমলকি
- লেবু
- তরমুজ ইত্যাদি ।
৫) চিন্তামুক্ত থাকুন:
যতটা সম্ভব চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করুন কারণ বেশি চিন্তা করলে আমাদের শরীরে কার্টিসোল নামে একপ্রকারের হরমোন নিঃসৃত হয় যা স্ট্রেস হরমোন নামেও পরিচিত যা আমাদের শরীরে আরও বেশি করে চর্বি জমতে সাহায্য করে ।
তাই সবসময় চিন্তামুক্ত থাকুন ।
৬) পর্যাপ্ত ঘুম:
গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা খুব কম পরিমানে ঘুমায় তাদের শরীরে বিশেষ করে পেটে চর্বি জমার প্রবণতা বেশি ।
অন্যান্য বিষয় গুলোর মতো এটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তাই ব্যায়াম, ডায়েট এগুলোর পাশাপাশি প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন ।
আরও পড়ুন: ওজন বাড়ানো বা মোটা হওয়ার সহজ উপায় |
৭) আর একটা বিষয় না বললে অসম্পূর্ণই থেকে যাবে, সেটা হলো…
বাঙালি মাত্রই বেশিরভাগই রসগোল্লা, সন্দেশ বা অন্য মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে খুব পছন্দ করে, আশা করি আপনিও নিশ্চই পছন্দ করেন ? যদি করেন তাহলে আজ থেকেই মিষ্টি জাতীয় খাবার গুলো খাওয়া বন্ধ করুন , কারণ এই সব খাবারে প্রচুর পরিমানে ক্যালোরি থাকে ।
তাই বেশি পরিমানে মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে বেশির ভাগ খাবার টাই শরীরে শক্তি তৈরির কাজে ব্যবহার না হওয়ার কারণে সেগুলি ফ্যাটি অ্যাসিড বা চর্বি হিসাবে শরীরে সঞ্চিত হয়ে যায় ।
তাই যতটা সম্ভব মিষ্টি জাতীয় খাবার বর্জন করুন । তবে মাসে এক দু বার সামান্য পরিমানে খেতে পারেন যদি একেবারেই নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পড়েন ।
আরও পড়ুন: ভিটামিন সি এর উপকারিতা( Benefits of vitamin C) |
এইভাবে উপরের দেওয়া টিপস গুলো যদি অনুসরণ করতে পারেন তাহলে আপনি মোটামুটি ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যেই ভালো ফল পাবেন ।
আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ ।