মোটা হওয়ার সহজ উপায় গুলো জানার আগে এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো সম্পর্কে আপনাদের সঠিক ধারণা হওয়াটা দরকার । উপায় গুলো সোজা হলেও কিছু নিয়মাবর্তীতার মাধ্যমে সেগুলোকে পালন করা উচিত ।
আজ পর্যন্ত আপনারা অনেকেই শুধু রোগ হাওয়া বা ওজন কমানোর উপায় গুলো সম্বন্ধেই শুনেছেন, মোটা হাওয়া বা ওজন বাড়ানোর উপায় সম্বন্ধে তেমন কিছু শোনেন নি । কিন্তু বিশ্বাস করুন, সমাজের একটা শ্রেণীর মানুষ যেমন ওজন কমানোর উপায় খুঁজছেন ঠিক তেমনি আর একটা শ্রেণীর মানুষ ওজন বাড়ানোর উপায়ও খুঁজছেন ।
তবে একটা বিষয় মাথায় রাখবেন যে, খুব তাড়াতাড়ি যেমন ওজন কামানো বা রোগ হাওয়া সম্ভব না , তেমনি খুব তাড়াতাড়ি ওজন কামানো বা মোটা হাওয়াও সম্ভব না । আর অনেকে শর্ট কাট রাস্তা বের করে নিলেও তাতে শরীরের ক্ষতিও প্রচুর হয়ে যায় ।
প্রথমে মোটা হওয়ার উপায় গুলো জানার আগে, মোটা না হওয়ার কারণ গুলো জেনে নেওয়া যাক। ..অর্থাৎ মোটা না হওয়ার জন্যে কি কি কারণ থাকতে পারে …
মোটা না হওয়ার বিভিন্ন রকমকারণ থাকতে পারে, যেমন খাবারের প্রতি অরুচি, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ,লিভারের সমস্যা, কিডনির সমস্যা, এডস এছাড়াও আরো বিভিন্ন রকম কারণ থাকতে পারে ।
মোটা হওয়ার সহজ উপায় :
উপায় গুলো অনুসরণ করার আগে ভালো হয়, যদি আপনি আপনার শরীরের BMI নির্ণয় করে নিতে পারেন । BMI নির্ণয় করলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার শরীর উচ্চতা হিসাবে আপনি মোটামুটি ওজনের আছেন , না খুব কম ওজনের আছেন। যেটা আপনার ওজন বাড়ানোর যাত্রাকে আরো সুবিধাজনক করে তুলবে।
BMI নির্ণয় করুন : BMI Calculator
[তবে আপনার যদি কোনো শারীরিক অভ্যন্তরীণ সমস্যা থাকে তাহলে সেটাকে আগে ভালো ডাক্তার দেখিয়ে সারিয়ে তুলুন ]
ওজন দুভাবে বাড়ানো যায় —
প্রথম পদ্ধতি: শরীরের চর্বি বাড়ানোর মাধ্যমে ও
দ্বিতীয় পদ্ধতি: শরীরের মাংসপেশি বাড়ানোর মাধ্যমে ।
প্রথম পদ্ধতি:
প্রথম পদ্ধতি টা তুলনামূলক ভাবে দ্বিতীয় পদ্ধতির থেকে সোজা । আপনি যেমন খুশি ভরপেট খেতে থাকুন বিশেষ করে কার্বোহাইড্রেট আর ফ্যাট জাতীয় খাবার গুলো বেশি করে খেতে পারেন,
যেমন …ভাত,রুটি, ডাল, দুধ, ঘি, মাখন, চকোলেট, আইস ক্রিম, তেলে ভাজা, পিজ্জা, বার্গার ইত্যাদি ।
এছাড়াও আপনি মিষ্টি জাতীয় খবর গুলো খেতে পারেন, তাতেও আপনার ওজন বাড়বে ।
এক কথায় সেই সমস্ত খাবার গুলো খান যে সব খাবার আপনার শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি প্রদান করবে,অতিরিক্ত ক্যালোরি আপনার শরীরে ফ্যাট হিসাবে সঞ্চিত হয়ে যাবে । ফলে চর্বি বাড়ার ফলে কয়েক মাসের মধ্যেই আপনি নিজেকে মোটা অনুভব করবেন ।
কিন্তু এতে একটা সমস্যা হলো যে, আপনার শরীরে যেমন চর্বির পরিমান বাড়বে তেমনি মাংসপেশির পরিমানও কমতে থাকবে । ফলস্বরূপ আপনার শরীরের কার্যক্ষমতা কমে যাবে এবং আপনার শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাধবে ।
এইকারণে, প্রথম পদ্ধতিটা অনুসরণ না করাটাই ভালো । তবে অজান্তে হলেও বেশির ভাগ মানুষের ওজন এই পদ্ধতিতেই বেড়ে যায় ।
দ্বিতীয় পদ্ধতি:
দ্বিতীয় পদ্ধতিটা সামান্য কঠিন ও সময় সাপেক্ষ হলেও, এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনি যেমন মোটা হবেন তার পাশাপাশি সুস্বাস্থ্যের অধিকারীও হবেন ।
সুস্থ্য স্বাভাবিক ভাবে ওজন বাড়াতে গেলে যেসব টিপস গুলো অনুসরণ করতে হবে…
ব্যায়াম:
প্রতিদিন, বিশেষ করে সকালে দৌড়ান , পারলে চেষ্টা করুন একটু জিম এ যাওয়ার বা কোনো যোগা ক্লাস এ যাওয়ার । এরফলে আপনার শারীরিক পরিশ্রম হওয়ার পাশাপাশি শরীরে রক্ত সঞ্চারণ বাড়বে, ক্ষুধাও বাড়বে, ফলে একটু বেশি করে খেতেও অরুচি হবে না। এছাড়াও নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরে অতিরিক্ত পরিমানে চর্বিও জমার হাত থেকেও রক্ষা পাবেন ।
প্রোটিন জাতীয় খাবার:
বেশি করে প্রোটিন( মাছ, মাংস, ডিম্ ইত্যাদি ) জাতীয় খাবার খান, বিশেষ করে সকালে দৌড়ে আসার পরে বা জিম থেকে আসার পরে । প্রোটিন আমাদের শরীরে মাংসপেশি তৈরিতে সাহায্য করে । তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমানে প্রোটিন জাতীয় খাবার খান বিশেষ করে ব্যায়াম করার পরে কারণ ব্যায়াম করার পরে খেলে সেটা আপনার শরীরে নতুন মাংসপেশি গঠনে সাহায্য করবে ।
কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট :
প্রোটিন জাতীয় খাবারের পাশাপাশি বেশি করে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারও খান।
কার্বোহাইড্রেট ব্যায়াম করাকালীন আপনার শরীরে শক্তি যোগাবে । আর আপনি যদি কার্বোহাইড্রেট খুব কম পরিমানে গ্রহণ করেন তাহলে কার্বোহাইড্রেট এর পরিবর্তে প্রোটিন আপনার শরীরে শক্তি যোগাবে, ফলে শরীরে মাংসপেশি গঠনের প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে ।
কিছু কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার :ভ্যাট,রুটি,দুধ,ওটস,আপেল, কলা,আনারস প্রভৃতিফল, শাক-সবজি ইত্যাদি ।
এর পাশাপাশি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ফ্যাট জাতীয় খাবারও রাখবেন কারণ ফ্যাট হার্ট ও ব্রেনকে সুস্থ্য রাখার জন্যে খুবই দরকারি ।
কিছু ফ্যাট জাতীয় খাবার: সারসের তেল, সয়াবিন তেল,জলপাই তেল, ঘি, মাখন, সামুদ্রিক মাছের তেল ইত্যাদি।
এক কথায় প্রতিদিন আপনি যা খান তার থেকে একটু বেশি পরিমানে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খান, যা আপনার শরীরে মাংসপেশি গঠন করবে ও শক্তিও যোগাবে । এর ফলে অপার ওজনও বাড়তে থাকবে ।
আরও পড়ুন: লেবুর উপকারী গুণাবলী( Health benefits of lemon ) |
পর্যাপ্ত ঘুম :
মোটা হওয়ার জন্যে ব্যায়াম ও প্রচুর পরিমানে যেমন পুষ্টিকর খাদ্য প্রয়োজন ঠিক তেমনি প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমানের ঘুম । পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুম ও বিশ্রাম নিলে তবেই আপনার শরীর নতুন করে মাংসপেশি তৈরিতে সক্ষম হবে ও সুস্থ্য, সবল হবে ।
সতেজ মন:
বিভিন্নও রকম দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে নিজেকে যত বেশি সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখতে পারবেন, আপনার ওজন বাড়ানো বা মোটা হওয়ার যাত্রা তাতো বেশি সুগম হবে ।
উপরে বর্ণিত টিপস গুলো যদি আপনি সঠিক ভাবে অনুসরণ করতে পারেন তাহলে আপনি মোটামুটি ৩ মাসের মধ্যেই ফলাফল গুলো দেখতে পারবেন ।
আর্টিকেল টি পড়ার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ